স্বাস্থ্য বীমা কি?পড়ুন বিস্তারিত

স্বাস্থ্য বীমা নিয়ে বিস্তারিত


স্বাস্থ্য বীমা হলো এমন এক আর্থিক সুরক্ষা যা ব্যক্তির চিকিৎসা খরচ কভার করার পদ্ধতি। এটি হঠাৎ করে আসা রোগ বা দুর্ঘটনা মোকাবেলায় অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান করে, যা অনেক সময় পরিবারগুলিকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে রক্ষা করে। যেমন হঠাৎ করে কোনো রোগ বা দুর্ঘটনা কবলে পড়ে শারীরিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা ব্যক্তির আর্থিক সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

একজন ব্যক্তি বা তার পরিবার জন্য স্বাস্থ্য বীমা অনেক উপকারে আসে। এটি অর্থনৈতিক সুরক্ষা এবং মানসিক শান্তি ও চিকিৎসা সেবার উন্নতি প্রদান করে। তাই বলা যায় স্বাস্থ্য বীমা যেকোনো ব্যক্তির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

স্বাস্থ্য বীমা


স্বাস্থ্য বীমার কত প্রকার ও কী কী

স্বাস্থ্য বীমা তিন প্রকার।যেমন: ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা,পারিবারিক স্বাস্থ্য বীমা ও গ্রুপ স্বাস্থ্য বীমা।

প্রত্যেকটি বীমায় কিছু নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন থাকে। নিচে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:


ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা: ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা হল একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত বীমা পলিসি যা একজন ব্যক্তির চিকিৎসা খরচ ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় সমূহ কভার করে। এই প্রকারের বীমা ব্যক্তির আর্থিক স্থিতিস্থাপকতা এবং চিকিৎসা সেবায় অগ্রাধিকার নিশ্চিত করে।


পারিবারিক স্বাস্থ্য বীমা: পারিবারিক স্বাস্থ্য বীমা একটি ধরণের বীমা পলিসি যা একটি পরিবারের সকল সদস্যদের চিকিৎসা সেবা ও ব্যয়ের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে। এটি বিশেষ করে কার্যকর হয় যখন পরিবারের কোনো সদস্য আকস্মিক ভাবে অসুস্থ হয় অথবা দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়, তখন এই পলিসি বিশাল চিকিৎসা খরচ বহন করে থাকে।


গ্রুপ স্বাস্থ্য বীমা: গ্রুপ স্বাস্থ্য বীমা একটি ধরণের বীমা পলিসি যা সাধারণত কর্মস্থলে কর্মীদের সুবিধার জন্য প্রদান করা হয়। এই ধরণের বীমা পলিসি বিভিন্ন কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যগত চাহিদা পূরণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।


পরিবারের অর্থনৈতিক সুরক্ষায় স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা

পরিবারের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য বীমার অনেকটা প্রয়োজন। এটি আপনার পরিবারের অর্থনৈতিক মাধ্যমে অস্তিত্ব বানিয়ে রাখতে সাহায্য করে এবং আপনি যদি অস্থির হন তাহলে তা আপনার পরিবারের দায়িত্বের উপর ভার কমাতে সাহায্য করে। এটি আকস্মিক চিকিৎসা ব্যয় থেকে পরিবারকে রক্ষা করে এবং অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এটি আপনার পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ সারসংক্ষেপ সম্পত্তি নিশ্চিত করে। দিন দিন যে হারে চিকিৎসা খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে স্বাস্থ্য বীমার কোনো বিকল্প নেই। তাই বলা যায় স্বাস্থ্য বীমা পরিবারের জন্য একটি অপরিহার্য সম্পদ হয়ে উঠেছে।


অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা

অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন কোনো পরিবারের সদস্য গুরুতর অসুস্থ হন, তখন তার চিকিৎসার জন্য হঠাৎ করে বড় ধরনের অর্থের প্রয়োজন পড়ে। এই পরিস্থিতিতে, স্বাস্থ্য বীমা থেকে প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা পরিবারটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কিছুটা রক্ষা করতে পারে। এর ফলে সাধারণত বড় ধরনের চিকিৎসা অথবা হাসপাতালে ভর্তির মতো অবস্থা সম্মুখীন হলে অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।এটি তাদের এমন এক সময়ে আর্থিক বোঝা হ্রাস করে, যখন আর্থিক চাপ পরিবারের উপর ব্যাপক মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। স্বাস্থ্য বীমা সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে, অসুস্থ ব্যক্তি ও তার পরিবার নিশ্চিন্তে সেরা সম্ভাব্য চিকিৎসা গ্রহণে মনোনিবেশ করতে পারে এবং তাদের মাথার চাপ কিছুটা লাঘব হয় , যা তাদের অসুস্থ সদস্যের দ্রুত সুস্থতা এবং পুনর্বাসনে সহায়তা করে।


বেঁচে থাকা ব্যক্তির জন্য স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজনীয়তা


স্বাস্থ্য বীমা বেঁচে থাকা ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি অপ্রত্যাশিত চিকিৎসা খরচের জন্য সহায়ক, যেটি অবাধ্য হতে পারে। এটি অতিরিক্ত আর্থিক প্রয়োজনে পরিবারকে সহায়তা করতে পারে। এটি অসুস্থ ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সাপোর্ট প্রদান করতে সাহায্য করতে পারে। এটি মানসিক চাপ ও চিন্তা হ্রাস করতে সহায়ক হতে পারে। এটি অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা দ্বারা পরিবারের অর্থনৈতিক সুরক্ষা প্রদানে সহায়ক হতে পারে। এটি পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলিয়ে রক্ষা করে এবং উন্নত স্বাস্থ্য প্রস্তুতি উন্নত করে। একটি গরীব মানুষ অসুস্থ হলে স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক চিন্তা করে। কারন উন্নত চিকিৎসা করানোর মতো তাদের কাছে বেশি অর্থ থাকে না। এর ফলে তারা ঠিক মতো চিকিৎসা করতে না পেরে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য বীমা থাকার কারনে তাদের চিন্তা কমেছে। স্বাস্থ্য বীমা থাকার কারনে তারা উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছে। স্বাস্থ্য বীমা মানুষকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জন্য উৎসাহিত করে, যা বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত করতে সহায়ক করে। এতে করে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও চিকিৎসা ব্যয় অনেকটা হ্রাস পায়।

বৃদ্ধি ও উন্নতির সুযোগ তৈরি করতে স্বাস্থ্য বীমা এর প্রয়োজনীয়তা

স্বাস্থ্য বীমা যে মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকে একটি স্থায়ী ও শক্তিশালী প্রভাব ফেলে তাদের উন্নতি ও বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করে, তা সহজেই বুঝা যায়। কারণ স্বাস্থ্য সমস্যার অভাবে মানুষ তার ক্ষমতা বা কাজের প্রদর্শনে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়, যা তার সমাজের একটি বড় বাধা তৈরি করে। স্বাস্থ্য বীমা ব্যক্তিদের অপ্রত্যাশিত অনেক চিকিৎসা খরচের হাত থেকে রক্ষা করে, যা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে বা তাদের জীবন কিছুটা উন্নত করতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা সহজলভ্য এবং অনেক দ্রুত হওয়ায় ব্যক্তিরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন এবং তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি সামগ্রিকভাবে জাতীয় উৎপাদনশীলতায় অবদান রাখতে সাহায্য করে। এই উপায়ে, স্বাস্থ্য বীমা ব্যক্তি, পরিবার, ও সমাজের বৃদ্ধি ও উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


কাদের স্বাস্থ্য বীমা  প্রয়োজন?


স্বাস্থ্য বীমা প্রায় সবার জন্যই প্রয়োজনীয়। কারন সকলের চিকিৎসা পরিষেবা প্রয়োজন। তাছাড়া এটি আর্থিক সুরক্ষা এবং মানসিক শান্তি নিশ্চিত করে।

স্বাস্থ্য বীমা না শুধুমাত্র চিকিৎসা খরচ হ্রাস করে, বরং এটি সাধারণ ও জটিল রোগ চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক ও অগ্রাধিকার পরিষেবা প্রদান করে। স্বাস্থ্য বীমা ব্যক্তিদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রিভেনটিভ কেয়ার গ্রহণে উৎসাহিত করে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক। ফলে, স্বাস্থ্য বীমা হলো একটি সমগ্র সুরক্ষা ব্যবস্থা যা ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের সকল সদস্যের জন্য অত্যন্ত জরুরী। স্বাস্থ্য বীমা সকল বয়সি মানুষের করা দরকার। 


মূল স্বাস্থ্য বীমা  শর্তাবলী

স্বাস্থ্য বীমা প্রাপ্তির জন্য কিছু মূল শর্তাবলী রয়েছে যা সাধারণত প্রযোজ্য হয় এরকম কিছু শর্ত নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১.বয়স: স্বাস্থ্য বীমা কিছু ক্ষেত্রে বাল্যবয়সী ও বৃদ্ধ ব্যক্তিদের উপর প্রযোজ্য নয়।

২. গুরুত্বপূর্ণ অসুস্থতা: কিছু স্বাস্থ্য বীমা পরিচালকরা নিরাপদ করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ অসুস্থতার রোগ বা অবস্থা উপর বীমা প্রদান করেন না। কিছু ‍কিছু অসুস্থ যাদের জীবনের শেষ এ এসে পড়েছে যাদের মৃত্যু অবধারিত তাদের নামে বীমা করা যাবে না।

৩. পূর্বাবস্থা: কিছু বীমা কোম্পানি আগের অসুস্থতা বা চিকিৎসার উপর ভিত্তি করে বীমা প্রদান করেন না। বীমা করার পরবর্তী দ্বায়িত্ব তারা নেন।

৪. প্রিমিয়াম প্রদানের অক্ষমতা: যে কোন বিষয়ে প্রিমিয়াম প্রদানের অক্ষমতা হলে বীমাধারী প্রাপ্তি হবেন না। প্রিমিয়াম হলো নগদ টাকা যেটা ‍দিয়ে বীমা চালানো হয়ে থাকে।


স্বাস্থ্য বীমা  মেয়াদকাল


স্বাস্থ্য বীমা মেয়াদকাল মানে সেই সময়কাল যার মধ্যে একটি বীমা পলিসির প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও সুবিধা প্রদান করা হয়। এটি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়কাল বা নির্দিষ্ট সময় ধারণ করে, যেখানে বীমা পলিসির বৈধতা শেষ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য বীমা মেয়াদকাল বীমা গ্রহন করার সময় পছন্দ মতো নেয়া যায়।



স্বাস্থ্য বীমা মানুষের স্বাস্থ্যসম্পর্কিত চিকিৎসা খরচ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য একটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। এটি মানুষের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা খরচ ও অপ্রত্যাশিত অবস্থা থেকে সুরক্ষা করে। এটি ব্যক্তির অর্থনৈতিক সুরক্ষা দিয়ে থাকে । সবশেষে, স্বাস্থ্য বীমা মানুষের জীবনকে একটি অনেক উন্নত, সুরক্ষিত ও সুস্থ মানুষের মধ্যে রূপান্তরিত করে। তাই বলা যায় স্বাস্থ্য বীমা আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url