অগ্নিবীমার পরিচিতি ও সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

 

ভুমিকাঃ

কোন চুক্তির দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অগ্নি দুর্ঘটনায় ক্ষতির জন্য বীমা গ্রহিতাকে বীমাকারী নির্দিষ্ট প্রেমিয়ামের বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রধান করার প্রতিশ্রুতি দেওয়াকে অগ্নি বীমা বলে।


অগ্নিবীমা
অনেক সময় দেখা যায় ব্যক্তির জানমাল কিংবা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অগ্নি দুর্ঘটনায় আর্থিক সংকটের মুখে পরে। তাদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য দেশের বিভিন্ন বীমা প্রতিষ্ঠান অগ্নিবীমা প্রধানের মাধ্যমে সহায়তা করে থাকে।



অগ্নিবীমার তাৎপর্য:


অগ্নিবীমার তাৎপর্য হল আগুনের বীমা প্রদান করা। এটি অনেক সময় জীবন্ত প্রাণী বা অন্য সম্পদ নিরাপত্তা প্রদানে ব্যবহৃত হয়। ধারাবাহিকভাবে, অগ্নিবীমা একটি নিরাপত্তা অনুমোদন নামক দাবিতে ব্যবহৃত হয়, যা আগুনের ক্ষতিরোধে বা অগ্নিবাহী সম্পদের হার্জিত বা নিখোঁজ কর্মসূচী বা দুর্ঘটনার ক্ষতি পূরণের জন্য অনুমোদন দেয়।


অগ্নিবীমার ক্ষেত্রে অগ্নিজনিত ক্ষতিগুলো: 

অগ্নিবীমার ক্ষেত্রে অগ্নি জনিত ক্ষতিগুলো হতে পারে, যেমন:


1. সম্পদের ক্ষতি: অগ্নি ক্ষতির একটি সাধারণ প্রকার হল সম্পদের ক্ষতি। এটি স্থানীয় বা সৃজনশীল অবস্থানের সম্পদ, যেমন বাসা, দোকান, কারখানা ইত্যাদি ধর্মী সম্পদের ক্ষতি হতে পারে।


2.মানুষের জীবনের ক্ষতি: অগ্নি আগুনের ধমনী, অন্ধকারে অথবা গ্যাসের অস্তিত্বের কারণে মানুষের জীবনের ক্ষতি ঘটতে পারে।


3. পরিবেশের ক্ষতি: অগ্নি পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে, যেমন জঙ্গল অথবা প্রাকৃতিক অঞ্চলে জ্বালানি ঘটে সেখানে প্রাণীবিশেষের ক্ষতি হতে পারে।


4. সার্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতি: অগ্নি ব্যক্তিগত অথবা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক ক্ষতি করতে পারে, যেমন ব্যক্তিগত অবস্থানের হার্জিতি, প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতিবিশেষ প্রতিষ্ঠানের নিশ্চিত আর্থিক ক্ষতি ইত্যাদি।

অগ্নি উৎপন্ন করতে পারে রোগ, জনসংখ্যা, সংস্থা ইত্যাদির সাথে সংক্রমণের সম্ভাবনা।


অগ্নিবীমার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় কিছু বৈশিষ্ট্য:

অগ্নিবীমার ক্ষেত্রে কিছু কিছু  বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় ।যেগুলো হলো :-

**অগ্নিবীমা একটি চুক্তি যার দুটি পক্ষ থাকে।

 **এটি ক্ষতিপূরণের চুক্তি।

** চুক্তির বিষয়বস্তু হবে সম্পত্তি:

**ক্ষতিপূরণ পেতে হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অগ্নিজনিত কারণে ক্ষতি হতে হবে ।

**বীমার প্রদত্ত প্রিমিয়াম হল প্রতিদান।

**ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ক্ষতির সমান বা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত নির্দিষ্ট হবে।

** বীমার বিষয়বস্তু অবশ্যই নির্ধারিত থাকবে। অগ্নিবীমার ক্ষেত্রে অগ্নি হলো সাধারণভাবে তাই যা দিয়ে কোন কিছু পুড়িয়ে ফেলা হয়।যা থেকে কেবলমাত্র আলো বা উত্তাপ সৃষ্টি হয় কিন্তু তা আগুন নয়। যেমন বজ্র বা বিদ্যুৎ উত্তাপ এগুলো আলো সৃষ্টি করলেও তা অগ্নিবীমার ক্ষেত্রে আগুন হবে না। তবে বজ্র বা বিদ্যুতের ফলে কোন জিনিস প্রচলিত হলে তা আগুন বলে বিবেচিত হবে।


অগ্নিবীমার অপরিহার্য উপাদান*

অগ্নিবীমা এক ধরনের চুক্তি। অন্যান্য বীমা ন্যায় অগ্নিবীমা চুক্তিরও অনেকগুলো অপরিহার্য উপাদান থাকে যার কোনো একটি না থাকলে অগ্নিবীমার চুক্তি হবে না।


অগ্নিবীমা চুক্তির অপরিহার্য উপাদান গুলো হলো:

*পক্ষ 

*প্রস্তাব দান 

*প্রস্তাব মূল্যায়ন

*স্বীকৃতি প্রধান 

*পারস্পারিক দায়-দায়িত্ব

*বীমাপত্র প্রধান


অগ্নিবীমা চুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ অপরিহার্য উপাদান: 


বীমাযোগ্য স্বার্থ:

বীমার বিষয়বস্তুর উপর বীমা গ্রহীতার যে আর্থিক স্বার্থ জড়িত থাকে তাকে বীমা যোগ্য স্বার্থ বলে।

নিম্নলিখিত কিছু শর্ত যা বীমাযোগ্য স্বার্থের অস্তিত্ব প্রধান করে:-

১/বীমার বিষয়বস্তটি দৃশ্যমান হতে হবে যা অগ্নি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন: একটি দালান বা বাড়ি। 

২/বীমার বিষয়বস্তুটি অক্ষত থাকলে বীমা আগ্রহীতা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন আর ক্ষতিগ্রস্ত হলে বীমা গ্রহিতা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।


অগ্নিবীমার গুরুত্ব:


অগ্নিবীমার গুরুত্ব অনেকগুলো বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত:

1. অগ্নিবীমার প্রয়োজনীয়তা এমন কোনো স্থানে যেখানে নিরাপত্তা মান বাজানো এবং অগ্নিবীমারের ব্যবহার বৃদ্ধি করা জরুরি হয়েছে, যেমন কারখানা, অফিস, বিভিন্ন সার্ভিস সেক্টর ইত্যাদি।


2. অগ্নিবীমার গুরুত্ব সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে, মানুষের জীবন এবং সম্পত্তির জন্য মহত্ত্বপূর্ণ হতে পারে।


3. অগ্নিবীমার গুরুত্ব নিরাপত্তা বাড়াতে সাহায্য করে এবং অগ্নিবীমারের সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।


4. অগ্নিবীমার দ্বারা জনসমাগম এবং বিভিন্ন স্থানের সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, যা প্রতিষ্ঠানের বা কোনও সার্ভিস প্রদানকারীর কর্মক্ষমতার বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


অগ্নিবীমার প্রকারভেদ:

অগ্নিবীমার প্রকারভেদ নির্ধারণ হয় তা অনুসারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভক্ত হয়। অগ্নিবীমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকার নিম্নলিখিত হতে পারে:


1.জীবন্ত প্রাণীর অগ্নিবীমা: এই প্রকারের অগ্নিবীমা মানুষ, প্রাণী বা উদ্যানের জীবন্ত সম্পদের জন্য ব্যবহৃত হয়।

  

2.প্রতিরোধমূলক অগ্নিবীমা: এই ধরণের অগ্নিবীমা অগ্নির বিস্তার ও ক্ষতির হার্জিত করে প্রাণী, সম্পদ, ও সংস্থা নিরাপত্তা প্রদান করে।

  

3.অগ্নিবিন্যাস ও রেস্কিউ অগ্নিবীমা: এই প্রকারের অগ্নিবীমা অগ্নির সঙ্গে যোগাযোগ করে অগ্নিবিন্যাস এবং রেস্কিউ কার্যক্রমে সাহায্য করে।


4.স্থানীয় অগ্নিবীমা: এই ধরণের অগ্নিবীমা একটি নিরাপত্তা সেবা প্রদান করে নিজস্ব এলাকায়, যেখানে অগ্নির আশঙ্কা সবসময় থাকে।


এই গুলোর বাইরে অগ্নিবীমার আরও অনেক প্রকারভেদ আছে যেগুলো বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অগ্নিবীমা ধরণের মধ্যে বলা থাকে।


মূল্যায়িত  অগ্নিবীমা পত্র:

অগ্নিবীমার অনেকগুলো প্রকারভেদের মধ্যে মূল্যায়িত বীমা পত্র বেশ জনপ্রিয়। এটি এমন এক ধরনের  চুক্তি যেখানে বীমার বিষয়বস্তুর মূল্য পূর্বেই নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। যখন অগ্নিকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন বীমা কারী বিভাগিতাকে উক্তমূল্যের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যেহেতু ক্ষতিপূরণের পরিমাণ পূর্বে নির্ধারিত করা রয়েছে। তাই বীমা দাবির সময় নতুন করে সম্পদের মূল্যের প্রমাণপত্র উপস্থাপন করতে হয় না। 


খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান জিনিসপত্র যেমন স্বর্ণালঙ্কা ও শিল্প কর্মের ক্ষেত্রে এই ধরনের বমাপত্র গ্রহণ করা হয়ে থাকে। মূল্যায়িত বীমা পত্রের বেশ কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে যা  নিম্নরূপ: 


 সুবিধা:


সম্পত্তির মূল্যের প্রমাণপত্র দাখিল করতে হয় না।

একজন বীমা কারী পূর্বে থেকেই ক্ষতির পরিমাণ বা দাবির পরিমাণ সম্পর্কে অবহিত থাকে।

নৈতিক বিপত্তির সম্ভাবনা এতে কম থাকে।

 

অসুবিধা:


এই বীমাটির ক্ষতিপূরণের নীতি যথাযথভাবে কার্যকর হয় না।

প্রিমিয়ামের হার তুলনামূলক বেশি হয়।

ক্ষতির পরিমাণ যদি আংশিক হয় তবে তার পরিমাণ নির্ণয়ে জটিলতা পোহাতে হয়।

সম্পত্তির মূল্য বেড়ে গেলে নতুন সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বীমা গ্রহিত তার স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়।


অমূল্যায়িত বীমা পত্র:


একটি মূল্যায়িত বীমা পত্রের একদম বিপরীত। যেহেতু এখানে ক্ষতির পরিমাণ পূর্বে নির্ধারিত করা থাকে না তাই যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তার বাজার মূল্যের উপর নির্ভর করে ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো বীমা গ্রহে তাকে  ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের লিখিত উপস্থাপন প্রয়োজন রয়েছে।


অগ্নিবীমার মেয়াদকাল:

অগ্নিবীমার মেয়াদকাল বিভিন্ন ধরণের অগ্নিবীমার জন্য বিভিন্ন হতে পারে। কোনো অগ্নিবীমা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বৈধ থাকতে পারে, যেমন কিছু অগ্নিবীমা একটি বছরের জন্য কর্তৃত্ব বা অধিকার প্রদান করে। অন্য অগ্নিবীমা প্রতিরোধমূলক হতে পারে এবং প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা অধিকার প্রদানের সহায়তা করে। কিছু ক্ষেত্রে, অগ্নিবীমার মেয়াদকাল বার্ষিক অথবা পর্যায়ক্রমিক হতে পারে, যার জন্য সাধারণভাবে নতুন অগ্নিবীমা নিয়ে পুরানোটি প্রতিস্থাপন করতে হয়।


অগ্নিবীমার নীতিমালা:

অগ্নিবীমার নীতিমালা হলো একটি পুস্তিকা বা নির্দেশিকা যা অগ্নিবীমার ব্যবহার সংক্রান্ত নীতি ও নির্দেশনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে। এটি জাহাজ, উদ্যোগ, বা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ও প্রচলিত নীতিগুলির সাথে সামঞ্জস্য সাধারে অনুসরণ করার জন্য প্রয়োজনীয়। অগ্নিবীমার নীতিমালা ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা ও সুরক্ষা সংক্রান্ত নিরাপত্তা মান বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:

ভালোভাবে পূরণকৃত বীমা দাবির করার ফরম,

সমর্থনকারি কাগজ বা নথিসহ উল্লেখ করা ক্ষতির পরিমাণ,

ফায়ার ব্রিগেডের প্রতিবেদন,

ফায়ার লাইসেন্স কপি,

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কমিশনারের প্রত্যয়ন বা বিবৃতি,

ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের আমদানির বা স্থানীয় চালানপত্র,

ঘটনার সময় উপস্থিতি কোন ব্যক্তির লিখিত বিবৃতি,

সিল-স্বাক্ষরসহ জেনারেল ডায়েরি বা জিডি’র অনুলিপি,

অগ্নিকাণ্ডের আগের তিন মাসের স্টক রেজিস্টারের অনুলিপি এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি।

এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের ধরণ অনুযায়ী অন্যান্য কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে।


অগ্নিবীমার ক্ষেত্রে যে অগ্নি দুর্ঘটনা প্রযোজ্য যেমন বজ্র বা বৈদ্যুতিক অগ্নি দুর্ঘটনায় ব্যক্তিগত ভাবে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কেউ ক্ষতির মুখে পরলে ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠান বীমা  সংস্থার সাথে আলোচনার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা পেতে পারে।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url